সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: সিলেটের আবাসন এসোসিয়েট বিচিত্র এক কোম্পনী । আভ্যন্তরীন দ্বন্ধ -কোন্দল , পারস্পরিক অবিশ্বাস , আত্মসাত মতলব আর কমিশন লোভের বেড়াজালে বন্দী কোম্পানীর সব কার্যক্রম। ‘সিলেটের এক আবাসন কোম্পানীতে ঘটছে তুঘলুকি কারবার ….’ শীর্ষক শিরোণামে প্রভাতবেলাসহ বিভিন্ন অনলাইনে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সম্প্রতি। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশে বিদেশে থাকা পরিচালকরা নড়ে চড়ে বসেন। দফায় দফায় বৈঠক- সভা করেন। পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন। কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাতেহ আহমদ চৌধুরী (শাহীন) কোম্পানীর সব পরিচালকের পক্ষে এই বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় গত ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানীর জমি বিক্রয় বন্দক বা বিনিময় করা যাবেনা। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ বিজ্ঞপ্তি বলবৎ থাকবে।প্রভাতবেলা প্রতিবেদক।
২৪ ডিসেম্বর এর এ বৈঠক নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে। কোন অধিকার বলে এ সভা। সভার সিদ্ধান্ত গ্রহণের কি আদৌ কোন ক্ষমতা আছে? আবাসন এসোসিয়েট এবং আবাসন ডেভলাপার্স কোম্পানীদ্বয়ের অবস্থা অনেকটা লেজে গোবরে অবস্থা।
আবাসন ব্যবসায় চমকে দেয়ার মত স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করে আবাসন এসোসিয়েট এবং আবাসন ডেভলাপার্স । সিলেট নগরীর আম্বরখানায় কোম্পানী দুটির মূল্যবান ১০০ ডেসিমলে জমি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানী দুটির কর্মকান্ড অনুসন্ধানে জানা গেছে বিস্ময়কর নানা তথ্য। বলা যায় দুটি কোম্পানী বিচিত্র সব কর্মকান্ড করে আসছে। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে কোম্পানীর চেয়ারম্যানের পদ আকড়ে আছেন সমালোচিত ব্যবসায়ী মাহবুবুল হক শেরীন। কোম্পানী দুটির কোন অডিট নেই,নেই অর্থ বিবরন,একাউন্ট থাকলেও লেনদেন নেই। সব পরিচালক মোটা অংকের টাকা দিয়ে শেয়ার কিনলেও একটি কোম্পনীর নামে জমি আছে আরেকটি কোম্পানীর নামে কোন জমি নেই। কোম্পানীর বর্তমানে কোন অফিস নেই,নেই কোন ইমেইল আইডি।
কোম্পানীর চেয়ারম্যান কমিশনের মতলবে জমি বিক্রির মিশনে ব্যস্ত। কখনো ব্যস্ত ব্যাংকে জমি বন্দক দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার মতলবে। কোম্পানীর একটি পক্ষ জমি ভাগ বাটায়ারা করে নিতে সোচ্চার,আরেকটি পক্ষ নতুন গ্রুপ তৈরী করে প্রবাস থেকে খবরদারী আর হুংকার দিয়ে দেশে আসার অপেক্ষায়।
এই গ্রুপ কিছু তহবিল সংগ্রহ করে বেপরোয়া আচরণ করছে এমন অভিযোগ একদল পরিচালকের। তারা বলছেন এই গ্রুপের তৎপরতায় নতুন করে উদ্বেগ এর সৃস্টি হয়েছে কোম্পানীর অভ্যন্তরে।
এদিকে বেশ কিছু মামলায় জড়িয়ে আছে আবাসনের দুটি কোম্পানী । দখলে থাকা সব জমি রেজিস্ট্রারীর বিষয়টিও ঝুলে আছে দীর্ঘ দিন থেকে। সমস্যায় জর্জরিত আবাসনে রয়েছে তহবিল সংকট।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবাসনের বড় সংকট আভ্যন্তরীন দ্বন্ধ-কোন্দল ,পারস্পরিক অবিশ্বাস আর স্বার্থ হাসিলের মতলব।
আবাসনের সামগ্রিক অবস্থা প্রসঙ্গে যুক্তরাস্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক এবং আবাসনের পরিচালক এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০০৪ সালে সাংবাদিকতার পাশাপাশি একটি অত্যাধুনিক মার্কেট নির্মানের জন্য নিজের সঞ্চিত অর্থ,নিকটআত্মীয়ের সহযোগীতা এবং একজন ব্যাংকার শুভাকাংখীকে শরীক করে আবাসন এসোসিয়েটে যোগ দেই। আমি উদোক্তাদের একজন এবং এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য ছিলাম। দেশে অবস্থানকালে এবং প্রবাসে এসে (অনলাইনে)আবাসনের সমস্যা সমাধানের জন্য শতাধিক বিভিন্ন ধরনের সভায় অংশ নিয়েছি। আজ চরম হতাশা নিয়ে আপনাদের সাহায্য আশা করছি। তিনি সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
আবাসনের বর্তমানে কোন বৈধ কমিটি নেই। ৫ বছর আগে এজিএম করে একটি কমিটি ঘোষনা করা হলেও বিস্ময়করভাবে তাদেরকে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়নি। পরিচালকদের সম্মতি নেই অথচ কিছুদিন আগেও প্রকল্প এলাকায় শোভা পাচ্ছিল জমি বিক্রির সাইনবোর্ড। জমি বিক্রির সাইনবোর্ড সরিয়ে এখন কোম্পানী দুটির নাম লাগানো হয়েছে।
বর্তমানে যিনি এমডি দাবীদার ফতেহ আহমদ চৌধুরী শাহীন, তিনি সীমাহীন দায়িত্বহীনতা,অযোগ্যতা,অদক্ষতা,জবাবদিহীতা ছাড়াই আবাসন এসোসিয়েট এবং আবাসন ডেভলাপার্স এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি দেশে অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কোম্পানী পরিচালনা করছেন যা বিস্ময়কর এবং বিরল।
বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরীন ১৩ বছর যাবত চেয়ারম্যান পদ দখল করে আছেন। জমি বিক্রির য়ড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন,কোম্পানীকে ব্যক্তি কেন্দ্রীক করেছেন।এমন অভিযোগ পরিচালকদের।
আবাসন এসোসিয়েট ,আবাসন ডেভলাপার্সের ব্যানারে সবকিছু পরিচালিত হলেও ডেভলাপার্স কোম্পানীর নামে কোন জমি নেই, এ ব্যাপারে উদ্বেগ রয়েছে সংশ্লিস্ট পরিচালকদের মাঝে। আবাসনের সমস্যা,সংকট, অনিয়ম,স্বেচ্ছাচারিতার বিবরন অনেক দীর্ঘ।
সিলেট৭১নিউজ / দৈনিক প্রভাতবেলা/ডিসেম্বর ৩১, ২০২০