Please Share This Post in Your Social Media
মুহাম্মদ আরাফাত:: একবিশ শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে, অন্তর্জালের যে মাধ্যমগুলো আমাদের পারস্পরিক মিলবন্ধন কে সহজ করে তুলেছে, তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বর্তমান যুগে অনেক ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে,যেমন ফেইসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইত্যাদি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম হলো ফেইসবুক।
বিশ্বে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২শত ৪কোটি ৭০লক্ষ। আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গেছে। বর্তমানে ৮৪ শতাংশ লোকের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।১৩থেকে ১৭ বছরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহার করে এবং তারা দিনে ৮ থেকে ১০ঘন্টা সময় ফেসবুকে ব্যয় করে। বর্তমানে করোনাকালে লক্ষণীয় দিক হলো, বইয়ের বদলে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত শিশুরা। পাবজি, ফ্রী ফায়ার গেইমস এর দিকে ঝুকে যাচ্ছে শিশুরা। এটি শিশু বিকাশের পথে বড় বাধা। কোন কোন সময় ভুয়া নিউজ প্রচার করে গুজব রটাচ্ছে। এই নিয়েছে, ঐ নিলো যা। কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে, আমরা সবাই মিলে। নাগরিক কবির পন্ড শ্রম কবিতার সেই চিলই আজকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যা প্রতিনিয়ত ঝড়াচ্ছে এক ভ্রান্তির জালে।সেই জাল, যেই জালে অনেক দূরের মানুষটাকে কাছে আনতে গিয়ে। আমার পাশে বসে থাকা মানুষটাকে আমি সরিয়ে দিচ্ছি হাজার আলোকবর্ষ দূরের পথে।সমাজে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছে বিভ্রান্তির ছত্রছায়া। বিভ্রান্তি হলো সেই তথ্য, চিন্তা, উপলব্ধি। যা ঘটনার স্বাভাবিক প্রভাহে চন্দ পতন আনে। বিভ্রান্তি সাধারণত তিনটি উপায়ে আসতে পারে।
প্রথমত সম্পূর্ণ মিথ্যা ,তথ্য ,ছবি বা ভিডিও। যেটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং প্রচার করা হয়। দ্বিতীয়ত কোন পুরাতন তথ্য, ছবি বা ভিডিও যা মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য বার বার শেয়ার করা হয়। তৃতীয়ত কোনো ব্যঙ্গচিত্র বা ব্যঙ্গ কবিতা যা আপাত দৃষ্টিতে হয়তো বড় কোনো ক্ষতির কারণ নয়।
কিন্তু মানুষকে বোকা বানানোর নিমিত্তে বানানো হয়। গত কিছুদিন আগে দেখেছি। নবজাতক বলছে আদা দিয়ে চা খান, ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা, এইচএসসি পরীক্ষা জুলাই মাসে, সিলেটে বোমা উদ্ধার পরে গ্রাইন্ডিং মেশিন, ইত্যাদি ইত্যাদি ভুয়া তথ্য খুব বেশি ভাইরাল হচ্ছে। গবেষণায় প্রমানিত যে প্রকৃত সত্য ঘটনা থেকে এই ভুয়া তথ্য গুলো সব সময় আমাদের যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক বেশি মানুষ দেখে এবং শেয়ার করে। সবচেয়ে আশঙ্কা জনক যে ব্যাপার সেটি হচ্ছে, মিথ্যা জানার পরেও এই সংবাদগুলো প্রতিনিয়ত দেখছি এবং শেয়ার করে যাচ্ছি। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা প্রতারণার শিকার অনেক লোক।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আধুনিক এবং শক্তিশালী হলেও সংবাদ মাধ্যম নয়।কারণ এর নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান তথ্য কমিশনার ড.মোহাম্মদ গোলাম রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিল্টারিং ছাড়া তথ্য বা মতামত প্রদান বেশিরভাগ সময় রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সঠিক সত্য, তথ্য-বহুল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পাওয়ার জন্য চাই ফিল্টারিং মাধ্যম, নির্দিষ্ট নিয়ন্রক এবং ব্যবহারকারীর রুচিপূর্ণ মন মানসিকতা।
লেখকঃশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, আল-এহসান সমাজ কল্যাণ সংস্থা, ওসমানীনগর, সিলেট।
Related