সিলেট : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর আওতায় হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে নির্ধারিত মূল্যের চাউল নিয়ে চরম অনিয়ম দূনীতি ও হরিলুট হচ্ছে । কাডধারিদের নামমাত্র চাউল দিয়ে কালো বাজারে বাকী সব বিক্রি করা হচ্ছে। একটি সিন্ডিকেট নিরবে এসব চাউল বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা কামাই করছে বলে খবর পাওয়া গেছে । ১০ টাকা মূল্যের চাউল বিক্রি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকার। ১০ টাকা মূল্যের চাউলসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রীর অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেও এখানে দূর্নীবাজরা রাজার হালে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। ছোট বড় সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি জেনেও না জানার ভান করছেন।
একটি দায়িত্বশীল সুত্রসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও কার্ডধারিদের নিকট থেকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া য়ায়। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১০ টাকা মূল্যের চাউল সরবরাহের জন্য ৮জন ডিলার রয়েছেন। চাউল বিতরনের সময় তদারকির জন্য ৮জন সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও রয়েছেন। কিন্তু তার পরও অনিয়ম দূর্নীতি হচ্ছে। খাদ্য অফিসের তথ্যমতে হতদরিদ্র লোকদের জন্য শুরু থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত লামাকাজি ইউনিয়নের ১৪৪.৪২ মেট্রিক টন, খাজাঞ্চি ১২৩.৭৯ মেট্রিক টন, অলংকারি ১১৬.৮৬০ মেট্রিক টন, রামপাশা ১৪৩.২৫ মেট্রিক টন, দৌলতপুর ১৩১.৩২ মেট্রিক টন, বিশ্বনাথ ১৮০.১৫ মেট্রিক টন, দেওকলস৭৯.৭১ মেট্রিক টন, এবং দশঘর ইউনিয়নে ৯২.৮৮ মেট্রিকটন চাল উত্তোলনের তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৬ সাল থেকে এই কর্মসুচী শুরু হয়। উত্তোলনকৃত চাউলের চার ভাগের একভাগ চাউলও কাডধারিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত হতদরিদ্রদের যে তালিকা উপজেলা খাদ্য অফিসে দাখিল করা হয়েছে, সেই কাডধারিদের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে বেশ কিছু নাম যাচাই বাচাই করে ভয়াভহ দূর্ণীতি অনিয়ম ও জালিয়াতির তথ্য পাওয়া যায়। তালিকায় মৃত ব্যক্তি, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি, ধনী ব্যক্তি এবং ডিলার, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের স্বজনদের নাম রয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক তালিকাও তৈরী হয়নি। তালিকাভুক্তদের অনেকের কাডও ডিলারের কাছে জমা থাকে। ডিলার নিজের ইচ্ছামত ডান ও বাম হাত দিয়ে জাল টিপসই/স্বাক্ষরের মাধ্যমে কাড পূরণ করে রাখার অভিযোগ ও রয়েছে। একবার চাল দিয়ে ৩/৪ বার লিখে রাখা হয়। যাচাই বাচাঁইকালে অধিকাংশ ব্যক্তি চাউল সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ একবার পেয়ে দ্বিতীয়বার পাননি বলে জানান। নিরাপত্তাজনিত কারনে বাচাইকৃত কাডধারিদের নাম ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। মূলত খাদ্য গোদাম থেকে চাউল উত্তোলন করে সে চাউল প্রতিটি ইউনিয়নে পৌছায় না। রাস্তায় উধাও হয়ে যায়। ট্রাক যাহাতে নিরাপদে গন্তব্যে পৌছে সেজন্য আইনঘরের বড় কর্তাকে খাম দেয়ায় কথাও জানাযায়।
বিশ্বনাথ খাদ্য গোদাম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন ইউনিয়নে কার্ডধারিদের যাচাই বাচাইয়ের খবর দ্রæত চতুদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দূর্নীতিবাজ চক্র কার্ডধারিদের কাড, খাতাপত্র ঘষা মাজা শুরু করেন। কোন কোন ইউনিয়নে কাডধারিদের হাতে কাড দিতে গেলে ডিলার ও তার লোকজন লাঞ্চিত হয়েছেন। অনেকেই কাডে তাদের নাম রয়েছে তা তারা জানেন না। সরকারি বেসরকারি ভাবে কেউ কেউ কিছু ত্রাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। লামাকাজি, অলংকারি, রামপাশা, দৌলতপুর এবং দশঘর ইউনিয়নে ব্যাপক দূর্নীতির তথ্য পাওয়া যায়। চাউল কালো বাজারে বিক্রি করে আয়ের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, ১০ টাকা মূল্যের চাউলের কাডধারিদের তালিকা মেম্বার চেয়ারম্যান দিলেও ডিলাররা তাদের ইচ্ছামত নাম পরিবর্তন করে। এতে সত্যকথা বলে টিকে থাকার কোন সুযোগ নেই।
বিএনপির শাসনামলের এক সন্ত্রাসী, যে আওয়ামীলীগের মিছিলে বার বার হামলা করেছিল সে এখন বড় আওয়ামীলীগার। সে এখন উপজেলার সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছে। বিশ্বনাথ খাদ্য অফিস তার ভাগ্য পরিবর্তন করে তাকে কোটিপতি বানিয়ে দিয়েছে। হতদরিদ্র ভুক্তভোগী লোকজন দায়িদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার দাস জানান, ১০ টাকা মূল্যের চাউলের ব্যাপারে কোন পেলে সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা এলএসবি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ জানান, ডিলারদের চালান মোতাবেক চাউল সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে আলাপকালে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০ টাকা মূল্যের চাউলের কিছু অনিয়ম দূর্নীতির কথা শুনেছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে কোন পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তদন্তে অনিয়ম দূর্নীতি প্রমানিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্বনাথ উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ১০ টাকা মূল্যের চাউলের বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। ইতিমধ্যে এবিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।