জানা যায়, সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচী কৃষিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। যার ফলে মানসম্মত ও পুষ্টিকর ফসল চাষে কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছেন এবং উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াসে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় এর সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রমতে, চলতি রবি মৌসুমে সিলেটের ১৩ উপজেলায় ৫ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচীর আওতায় ভূট্টা চাষে একেকজন কৃষক ২ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার সুবিধা পাচ্ছেন।
যার মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে সিলেট সদরে ৪১০ জন কৃষক, দক্ষিণ সুরমায় ৩৮০, গোয়াইনঘাট ৪১০, বালাগঞ্জ ৩৮০, ওসমানীনগর ৩৮০, কোম্পানীগঞ্জ ৩৮০, বিশ্বনাথ ৩৮০, ফেঞ্চুগঞ্জ৩৮০, গোলাপগঞ্জ ৩৮০, জৈন্তাপুর ৩৮০, কানাইঘাট ৩৮০, জকিগঞ্জ ৩৮০ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৩৮০ জন কৃষক ভূট্টা বীজ ও সার পাচ্ছেন। অনুরূপভাবে, প্রত্যেক উপজেলায় উপরোক্ত কৃষক ব্যতীত নতুন করে আরো ৫০০০ জন কৃষক সরিষা ফসলের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকেই পাচ্ছেন এক কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার।
কৃষি বিভাগ সিলেট এর উপ-পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, সিলেটে এবার প্রথমবারের মতো বেশি পরিমাণ জমিতে ভূট্টা চাষ করা হচ্ছে। এর পুষ্টিগুণও বেশি। তাছাড়া, ধানের চেয়ে ৩ ভাগের একভাগ কম পানি দিয়ে এ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ধানে আমীষের পরিমাণের হার ৬-৭ ভাগ হলেও ভুট্টায় এর হার ১২ ভাগ। এমনকি একই জমিতে ধানের চেয়ে আড়াইগুণ বেশি ভুট্টা উৎপাদন সম্ভব হয়।
এদিকে, সূর্যমুখী ফসলের জন্য সিলেট জেলায় ১০০ জন কৃষক সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন। এর মধ্যে সিলেট সদরে ১০ জন কৃষক, দক্ষিণ সুরমায় ১০, গোয়াইনঘাট ১০, বালাগঞ্জ ০৫, ওসমানীনগর ০৫, কোম্পানীগঞ্জ ০৫, বিশ্বনাথ ০৫, ফেঞ্চুগঞ্জ ০৫, গোলাপগঞ্জ ১০, জৈন্তাপুর ১০, কানাইঘাট ০৫, জকিগঞ্জ ১০ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১০ জন কৃষক রয়েছেন। তাদের একেকজন পাচ্ছেন দেড় কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার।
অপরদিকে, শীতকালীন মুগ ডাল উৎপাদনের জন্য সিলেট জেলায় ৪০০ জন কৃষক সরকারি প্রণোদনার আওতায় এসেছেন। এর মধ্যে সিলেট সদরে ৪০ জন কৃষক, দক্ষিণ সুরমায় ৩০, গোয়াইনঘাট ৩০, বালাগঞ্জ ৩০, ওসমানীনগর ৩০, কোম্পানীগঞ্জ ৩০, বিশ্বনাথ ৩০, ফেঞ্চুগঞ্জ ৩০, গোলাপগঞ্জ ৩০, জৈন্তাপুর ৩০, কানাইঘাট ৩০, জকিগঞ্জ ৩০ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৩০ জন কৃষক রয়েছেন। এ কর্মসূচীর আওতায় একেকজন কৃষক পাচ্ছেন ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার।
অন্যদিকে, গ্রীষ্মকালীন মুগ ডাল উৎপাদনের জন্য সিলেট জেলায় ২০০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হবে। এর মধ্যে সিলেট সদরে ২০ জন কৃষক, দক্ষিণ সুরমায় ২০, গোয়াইনঘাট ২০, বালাগঞ্জ ১০, ওসমানীনগর ১০, কোম্পানীগঞ্জ ১০, বিশ্বনাথ ১০, ফেঞ্চুগঞ্জ ২০, গোলাপগঞ্জ ২০, জৈন্তাপুর ২০, কানাইঘাট ১০, জকিগঞ্জ ১০ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ২০ জন কৃষক সুবিধা পাবেন। এ কর্মসূচীর আওতায় প্রত্যেক কৃষক পাবেন ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার।
সার্বিক বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেট এর উপ-পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, খাদ্য ঘাটতি দূর এবং লাভজনক ফসল উৎপাদনে সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টা রয়েছে। এজন্য সরকার কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, এসডিজি ২০৩০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আমাদেরকে ডাবল পরিমাণে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। এজন্য ধানের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সরকার ভূট্টাসহ নানা জাতের ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। উপপরিচালক সালাহ উদ্দিন আরো বলেন, ইতোমধ্যে সিলেটে প্রণোদনা সামগ্রীর ৯০ ভাগ সুবিধাভোগী কৃষকের কাছে পৌঁছে গেছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে শতভাগ কৃষক সরকারের দেয়া বিনামূল্যের বীজ ও সার পেয়ে যাবেন। তিনি রবি শস্যের ফলন ভালো হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।