সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বৈষম্যমূলক ধারা সংশোধনসহ সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে সিলেট জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং চট্ট-৭০৭)। ইতিমধ্যে দাবী আদায়ের লক্ষে গত শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করেছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। গত রোববার দুপুরে দক্ষিণ সুরমার আল নুর কমিউনিটি সেন্টারে শ্রমিক ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্ত ১২৮টি শাখার উপ পরিষদের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। সোমবার দুপুরে সিলেট নগরির কোর্ট পয়েন্টে অনুরূপ দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে বলে সংগঠন সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, সরকার কর্তৃক ‘দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ প্রণীত হয়েছে। ইতোপূর্বে ১লা নভেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা থাকলে ও বিধি, প্রবিধান প্রণয়ন না হওয়ায় সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কার্যকরের তারিখ ১ (এক) সপ্তাহ করে ২ বার পিছিয়েছেন।’
সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৬৬ ধারায় উল্লেখ্য রয়েছে, কোন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে তাকে ২৫০০০/- (পচিশ হাজার) টাকা জরিমানা ও ৬ (ছয়) মাসের কারাদন্ড। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালকরা কি এই জরিমানা দিতে সক্ষম? এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ৮ম শ্রেণি পাশ হতে হবে, এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সাধারণ শ্রমিকদের মনে প্রশ্ন জেগেছে জাতীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিটি বা পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার কারো বেলায়ই শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন অনুভব করা হয়নি। অথচ সিএনজি চালিত অটোরিক্সার চালক হতে হলে বা ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে ৮ম শ্রণি পাশ লাগবে। এটাও শ্রমিকরা চরম একটি বৈষম্য হিসাবে দেখছেন।’
একই সাথে আইনের ৭২ ধারায় লেখা আছে রেজিস্ট্রেশন ব্যতিত মটরযান চালনা সংক্রান্ত, যদি কোন ব্যক্তি ধারা-১৬ এর বিধান লঙ্ঘন করেন তাহলে উক্ত লঙ্ঘন জনিত অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাসের কারাদন্ড ও ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
এছাড়াও দীর্ঘ ৫ বৎসরের বেশী সময় যাবৎ সিলেটে সি.এন.জি চালিত অটোরিক্সার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না। রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকারি নির্দিষ্ট ফি জমা দেওয়া থাকলেও চালকরা বা মালিকরা রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছেন না। এই বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে যে, সিলেটে যেন এই গাড়িগুলির বিক্রয় বন্ধ করা হয় এবং জমাকৃত ফিঃ প্রদানকারীদের গাড়িগুলিকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়। কিন্তু সিলেটের প্রশাসন প্রসাশন এব্যাপারে সম্পূর্ন নিরব।’
সড়ক পরিবহণ আইনের ধারা-৭৫, ধারা-২৫, ধারা-৭৬ এও আইনের মধ্যে বৈষম্য করা হয়েছে। যার কারণে উক্ত আইন দ্বারা সি.এন.জি চালিত অটোরিক্সা চালকরা যাত্রি সেবার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করার একমাত্র পথ সেটা বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এজন্য নেতৃবৃন্দ এ আইনের বৈষম্যমূলক ধারাগুলিকে সংশোধন করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ধারায় (৭২) (৭৩) (৭৫) (৭৭) (৭৯) (৮৪) (৮৬) (৮৯) (৯২) (৯৮) বা (১০৫) এর অধিন যে কোন ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে পুলিশ কর্মকর্তা চালককে যে কোন সময় গ্রেফতার করতে পারেন। এই সমস্ত বিষয়ে উক্ত আইনকে অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ চালকরা পুলিশি হয়রানির শিকার হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এজন্য শ্রমিকরা চরম আতঙ্কিত।
সিলেট-মৌলভীবাজার লাইন উপ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলতাব আহমদ চৌধুরী এব্যাপারে আলাপকালে জানান, সরকার কর্তৃক প্রণীত সড়ক আইন জনগনের জন্য কল্যাণকর। এ আইনে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার মালিক এবং শ্রমিকদের জন্য বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। ট্যাক্স ভ্যাট ঠিকমত জমা দেয়ার পরে সিএনজি রাস্তায় উঠলে অবৈধ হয়ে যায়। এজন্য সিএনজির শো-রুম কিংবা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান প্রথমে বন্ধ করতে হবে। শো-রুম বন্ধ, পুলিশী হয়রানী, বিআরটিসি দূর্নীতি বন্ধ এবং সিএনজি পার্কি ব্যবস্থা নিশ্চিত সহ পরিবহণ আইন সংস্কারের জন্য সরকারের প্রতি তিনি জোর দাবী জানান।
সিলেট জেলা সি.এন.জি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নংচট্ট-৭০৭ এর সভাপতি মোঃ জাকারিয়া এ ব্যাপারে আলাপকালে জানান, সড়ক পরিবহণ আইনকে সাধুবাদ জানাই। তবে এ আইনে সিএনজি অটোরিক্সার প্রতি চরম বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি পরিবহণ আইন সংশোধন সহ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী আদায়ে সর্বমহলের সহযোগিতা কামনা করেন।