সিলেট অঞ্চলে শুরু হয়েছে রোপা আমন ধান কর্তন। তাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানে পোকার আক্রমণ কিংবা পচন নামক রোগ-বালাইয়ে তেমন ক্ষতি হয়নি। এজন্য ফলন আশার চেয়েও ভালো হয়েছে। এ পর্যন্ত স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন উফশী জাতের ৪১৮৭ হেক্টর জমির ধান কেটে কৃষকরা গোলায় তুলেছেন। যা থেকে হেক্টর প্রতি ২.৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, সিলেট অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ৪ লক্ষ ২ হাজার ১২ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়। কৃষি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যায় কৃষকরা সব রকমের রোগ-বালাই থেকে ধানক্ষেত মুক্ত রাখতে নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এতে কৃষকরা বেশ লাভবান হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত সিলেটে ৩০০ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ১০০২ হেক্টর, হবিগঞ্জে ৯৫০ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জ জেলায় ১৯৩৫ হেক্টরসহ ৪১৮৭ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের রোপা আমন ধান কর্তন করা হয়েছে। উৎপাদন করা জমি থেকে প্রতি বিঘায় ১৪ মণ ধান, প্রতি হেক্টরে ৪.২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। যা থেকে সর্বোচ্চ ২.৯ এবং সর্বনি¤œ ২.৭ অর্থাৎ গড় ফলন ২.৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
এদিকে, সিলেট জেলায় এ পর্যন্ত ৫০০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান কর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সদর ৫০ হেক্টর, দক্ষিণ সুরমা ৩০ হেক্টর, গোয়াইনঘাট ৬০ হেক্টর, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর ৭০ হেক্টর, কোম্পানীগঞ্জ ২০ হেক্টর, বিশ^নাথ ৩০ হেক্টর, ফেঞ্চুগঞ্জ ২০ হেক্টর, গোলাপগঞ্জ ৬০ হেক্টর, জৈন্তাপুর ৪০ হেক্টর, কানাইঘাট ৩০ হেক্টর, জকিগঞ্জ ৩০ হেক্টর ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ২০ হেক্টর জমির ধান কর্তন করে কৃষকরা ঘরে তুলেছেন। কৃষি বিভাগের উপ পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
এদিকে, গত সপ্তাহে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের হিলালপুরে উৎসবের মাধ্যমে ধান কর্তন শুরু হয়। স্থানীয় কৃষক বাদল মালাকার ও আব্দুল হামিদের ব্রি ধান-৭০ কেটে এ মৌসুমের ধান কর্তনের উদ্বোধন করেন ঢাকা খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (শষ্য উইং) মো. আব্দুর রাজ্জাক ও অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলীমুজ্জামান। এ সময় সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহজাহান, উপ-পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিনসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও এলাকার কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক বাদল মালাকার বলেন, এবার জমিতে ‘ব্রি ধান-৭০’ আবাদ করে খুবই আনন্দিত হয়েছি। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের শিখানো আলোক ফাঁদ তৈরি, নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, সুষম সার প্রয়োগ, ক্ষেতের মধ্যে ডালপালা পোঁতা, ক্ষেতের পানি ঘাটতি পূরণসহ বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়ন করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আগামীতেও এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষিতে মনোনিবেশ করবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মজুমদার মোঃ ইলিয়াস বলেন, আমাদের আশার চেয়ে এবার রোপা আমনের ফলন ভালো হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে দু’তিন দিনের ঝির ঝির বৃষ্টিতে পাকা ধানের কোন ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান গোলায় তোলা সম্ভব হলে কৃষকদের মুখে আমরা হাসি দেখতো পাবো। এতে কৃষিতে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।