আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওসমানীনগরের সিকন্দরপুর (পশ্চিমগাঁও) গ্রামে আবারো প্রতিরাতে ফাঁকাগুলি ছুঁড়ে আতংকের সৃষ্টি করা হচ্ছে। মধ্যরাতে ঘুমন্ত গ্রামবাসী হঠাৎ গুলির শব্দে দিশেহারা হয়ে পরেন। ২০১৩ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আব্দুল কদ্দুস হত্যা মামলায় সন্দেহজনক হিসাবে চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে মৃত প্রমেশ সূত্রধরের পুত্র প্রনধীর সূত্রধরকে আটক করে সিইডি পুলিশ। প্রনধির সূত্রধর আটকের পর থেকে প্রায়ই রাতের বেলা গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন স্থানীয়রা। এতে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিতি সিকন্দরপুর এখনও আগের মতো হামলা-মামলার পাশাপাশি অগ্নি সংযোগ ও গোল্গাুলির জনপদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ওসমানীনগরের সিকন্দরপুর গ্রামে পূর্ব বিরোধের জের ধরে বিবাদমান পক্ষ গুলোর মধ্যে প্রতিদিনই ঘটছে অনাকাংখিত ঘটনা। গ্রামে একাধিক লাইসেন্সধারী বন্দুক থাকার পরও একাধিবার প্রশাসন ওই গ্রাম থেকে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করলেও সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে একে অপরকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ছে ফাঁকাগুলি। গোলাগুলির খবর পেয়ে থানা পুলিশ সিকন্দপুর গ্রামে গেলেও দুর্বৃত্তরা গাঁ ঢাকা দেয়ায় ব্যর্থ হয়ে পড়ে পুলিশের অভিযানও। তবে গুলির বিষয়টি স্বিকার করলেও কারা গুলি ছুঁড়ে আতংক তৈরী করছে তাদের নাম বলতে নারাজ স্থানীয়রা। সরেজমিনে সংবাদিকরা গ্রামে গেলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের অনেকেই জানান, আমরা রাতে গুলির শব্দ শুনতে পাই। কিন্ত কে বা কারা এ রকম আতংক সৃষ্টি করছে তা বলা মুশকিল। তবে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে গ্রামের পশ্চিমগাঁওয়ে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছে। বিষয়টি নিস্পত্তি হলেও সম্প্রতি গ্রামের প্রনধীর সূত্রধর আটকের পর আবারও অস্ত্রবাজরা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠার আশংকা তৈরী হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্রতিরাতে গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে স্থানীয়দের। অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে অধিকাংশ মানুষ বাইরে থাকায় গ্রামের ওই এলাকায় নিরিবিলি স্থানগুলোতে ইদানিং বিভিন্ন রকমের জুয়া ও মাদকের আগ্রাসনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অনেকেই।
পূর্বে ২০১২ সালে বিরোধ নিস্পত্তিকরনে জেলা পুলিশের উদ্যোগে গ্রামে ‘বার্ষিক ‘মোবিলাইজেশন কন্টিনজেন্ট ক্যাম্প’ স্থাপনের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয় । পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনের পর আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে‘ভিলেজ পলিটিক্স’। এ সময় অস্ত্রের ঝরঝনানিতে সিকন্দরপুর ও পাশর্^বর্তী গ্রামের অনেক পরিবার ভয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। ২০১৭ সালে স্থানীয় উমরপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়ার উদ্যোগে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ও উপজেলার ৮ ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে কয়েক দফা বৈঠকের পর সিকন্দরপুরের দীর্ঘ এ বিরোধটি আপোষে নিস্পত্তি হয়।
উমরপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন, সিকন্দরপুর গ্রামের গোলাগুলির বিষয়টি নতুন নয়। পূর্বের বিরোধের বিষয়টি আপোষে নিস্পত্তি হলেও গত কিছুদিন থেকে আবারো রাতে ফাঁকাগুলি ছুঁড়া হচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে আমি মাসিক আইন শৃংখলা কমিটির সভায় ও থানার ওসি সাহেবকে অবগত করেছি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিকন্দরপুর গ্রামে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি একাধিকবার আপোষে নিস্পত্তি হয়েছে। তারপরও গত কিছুদিন থেকে আবারও রাতের আঁধারে গুলির হওয়ার ঘটনায় আতংক বিরাজ করছে।
গ্রামের আব্দুল কদ্দুস হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই (সিআইডি) আব্দুল হাদি বলেন,ওই হত্যা মামলায় প্রনধিরকে আটক করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদ মোবারক বলেন, আমি এ থানায় নতুন। যতদুর জানি ওইগ্রামে প্রচুর লাইসেন্সধারী অস্ত্র রয়েছে। প্রতি রাতে গুলি ছুঁড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।