এহিয়া আহমদ :: “ধর্ষণ” সমাজের একটি ভয়ানক ব্যাধি। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এই ব্যাধি ক্রমশ বেড়েই চলছে। আর তার শিকার হয়ে সমাজে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো নারী, কন্যা শিশু থেকে বৃদ্ধা মহিলারাও অনিরাপদে ভুগতেছেন। ধর্ষণকারী হায়েনাদের কবলে পড়ে সর্বশ্ব সম্ভ্রম হারিয়ে জীবন-মৃত্যুর দরজায় দাড়িয়ে কড়া নাড়তেছেন অনেকেই।
সমাজের প্রত্যেকটি স্থানে একের পর এক ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তরুণী কিংবা বিবাহিত নারীরা। এসব হায়েনাদের থাবা থেকে বাদ পড়ছে না নাবালিকা শিশুরাও। দিন দিন ধর্ষণ যেন প্রতিযোগিতামূলকভাবে বাড়ছে। নৃশংস ও অভিনব কায়দায় ধর্ষণ ও গণধর্ষণ করে চলছে দুর্বৃত্তরা। আবার গোপনে ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করে নানা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, কোনো কোনো সময় নির্যাতিতা পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করে বড় অংকের চাঁদা দাবি করে ধর্ষণকারীরা। এ বছর (জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত) প্রথম ছয় মাসেই সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন নারী ও শিশু। তারমধ্যে, ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে ২৬ জনকে। আবার অনেকেই হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
গত সোমবার (০৮ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষণ সম্পর্কে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
দেশের ১৪টি জাতীয় দৈনিকের তথ্য বিশ্লেষন করে এই তথ্য তুলে ধরে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়েশা খানম জানান, গতবছর সারাদেশে ৯৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয় ৬৩ জন নারী ও শিশুকে। অর্থাৎ, গতবছর যে পরিমাণ ধর্ষণ হয়েছে তার অর্ধেক সময়ে এবছর ধর্ষণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ।
এই পরিসংখ্যান বলছে, শেষ ছয়মাসে শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছেন ৫৪ জন নারী, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৩ জনকে, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭০ জন। এছাড়া এসিড সন্ত্রাস, যৌতুক, পাচার, শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা তো ঘটছেই।
এদিকে, ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্যমতে ধর্ষণ সম্পর্কে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে মোট ৪৯৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে যা ২০১৮ সালের ১২ মাসে ছিল ৫৭১ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ হারে, যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯৬ শিশু। যেখানে কি না গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এ সংখ্যা ছিল ৩৫১ জন। এপ্রিল এবং মে এ দুই মাসেই শিশু ধর্ষণ হয়েছে ২৪১ টি যা কি না মোট ধর্ষণের অর্ধেকেরও বেশি।
চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ধর্ষণ হওয়া ৪৯৬ শিশুর মধ্যে ৫৩ শিশুকে গণধর্ষণ এবং ২৭ প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ এবং ২৩ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ঐ ছয় মাসে ৭৪টি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। অর্থাত্ প্রতি মাসে গড়ে ৮০টির অধিক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিএসএএফ-এর তথ্য অনুযায়ী গত চার মাসে সর্বনিম্ন আড়াই বছর বয়সের শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ‘বিএসএএফ’ মনে করে শিশু ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।
এমন বাস্তবতায় বর্তমান জাতীয় পরিস্থিতি, অব্যাহত নারী-শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ ও সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়ে উদ্বেগ্ন মহিলা পরিষদ।
সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা তুলে ধরেছেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- সব ক্ষেত্রে পুত্র-কন্যার সমান অধিকার নিশ্চিত করা, সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, নারী নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা, বিচার কাজের সঙ্গে জড়িত সবার প্রশিক্ষণ সূচিতে নারীর মানবাধিকার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা।
সিলেট৭১নিউজ/১৯ জুলাই/শুক্রবার/এআ